তারেক খান

অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড ও মানবীয় বৈশিষ্ট্য প্রাধান্য দিয়ে লেখাই উদ্দেশ্য।
শৈশব ও বেড়ে ওঠা নড়াইল শহর থেকে তিন কিমি পুবদিকে ছোট্ট গাঁও তালতলায়। সেটা দাদির পৈতৃক বাড়ি। সেখানেই বন্ধুদের সাথে ডিম বেচা, সবজি কেনা, গরু চরানো, স্কুল পালানোর মত সব হৈচৈ কাণ্ড।
তারপর বন্ধুদের ছেড়ে কৃত্রিম বাস্তব আর স্বপ্নের তাড়া খেতে খেতে ঢাকায়।
১৯৯৫ এক দুর্ঘটনার কাল। দৈবক্রমে ঢাবিতে ভর্তি, দিন দিন শুধুই প্যাঁচ লেগে যেতে লাগল ‘বাস্তব’ আর স্বপ্নের অসংখ্য জালে। সেখানকার পণ্ডিতরা শেখালেন বাস্তব আর স্বপ্নের ধারা, বৈশিষ্ট্য, উদ্দেশ্য।
ধন্যবাদ, পণ্ডিতগণ!
যদিও এই পণ্ডিতরা ঠিকমত শেখান নাই যে, এই বাস্তবতা কৃত্রিম সৃষ্টি। এর পেছনে আছে সীমাহীন অজ্ঞতা।
এখন কুণ্ডলি পাকানো ধোঁয়া আর ধুলোর সাগরে কানকোবিহীন প্রাণীর মত অবিরাম ছুটছি ঢাকা শহরে। তবু জগদ্দল পাথর হয়ে চেপে আছে বাপের গপ্প, দাদির গপ্প।
“এই গ্রামটা ছিল আমার দাদার,” শুরু করলেন দাদি জুমা খানম। দাদির দাদা গনি মুনশি পুরো একটা গ্রামের মালিক! দাদির অন্য অহঙ্কার, তার শ্বশুর ছিলেন এই মুলুকের প্রথম হাফেজ, দবিরউদ্দিন।
আহ! সেকি ঐশ্বর্য!
কিন্তু অল্পক্ষণেই দাদি তার বাপ ও বরের কথা মনে করে বেদনাকুল হয়ে পড়েন। পানি এসে যায় তার দুই চোখে। প্রায়ই শুনতে পাই দাদির দীর্ঘশ্বাস, “বাপ আর বর দু-ই গেল অকালে। বাপের পর দাদা। আর বরের পর শ্বশুর।” দাদির ক্ষোভ উত্তরাধিকার নিয়ে। “দাদার উত্তরাধিকার শুধুই চাচারা! আর শ্বশুরের উত্তরাধিকার ভাসুর-দেবর!” দাদি প্রায়ই একা একা কথা বলেন। মাঝে মাঝে আমাকে প্রশ্ন করেন আর নিজেই উত্তর দেন। “তাহলে আমি কে? আমি কেউ না! হাহাহা!” হাস্যকর নাকি ভয়ংকর? আমি দাদির চোখের দিকে চুপচাপ চেয়ে থাকি।
লেখার ইচ্ছা ও শৈশবের গপ্প তাড়া করে সারাক্ষণ। কিন্তু সময়ের দাবি অন্য রকম। হয়ত এ কারণেই নানা পেশায় নাম লেখানো হল কালে-অকালে।