তারেক খান
বারোটা
বাজতে চলল। আমি
মশারি বেঁধে বিছানায় গেলাম। সেও
মনে মনে তৈরি হয়েছে। শাড়ি
খুলে আলনায় ঝুলিয়ে দিল। তারপর
সাজটেবিলে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে
গলায় আর ঘাড়ে সুগন্ধি
পায়োডার ছিটিয়ে বিছানায়।
অন্য দিনগুলোর মত।
আমি রিমোট
তুলে টিভি বন্ধ করলাম।
আজ তেমন
ইচ্ছে নেই। তাছাড়া
ওর নিয়ম অনুযায়ী আজ
ওটা হবারও নয়।
তবু। ত্বকে
ওর পরশ পেয়ে আমার
গা একটু মুড়িয়ে উঠল। আমি
ওকে কোলবালিশের মত জড়িয়ে ধরলাম;
যেমনটা আমি সময়-অসময়
করে থাকি। এভাবে
ঘুমাতে আমার দারুণ লাগে। কিন্তু। আমার
দিকে ঘুরে শুয়ে ওও
আমাকে জড়িয়ে ধরল।
এভাবে ঘুমাতে ভালো লাগে
না। আমি
ওর গলার মধ্যে মুখ
ডুবিয়ে দিলাম। ভাবলাম,
ও হয়ত আশা করছে। যদিও
জানি, যেদিন এসব কিছু
হবার তা হয় বাতি
বন্ধের আগেই।
আমার ইচ্ছেটা
বেড়ে উঠল। একটু
জোরে চেপে ধরলাম।
‘কী করো?’ ও বলল। আমি
শুধু ‘উঁ’বলে ঠোঁট এগিয়ে
নিলাম। ও
বলল, ‘আজ আবার এসব
কী হচ্ছে?’ আমি বললাম, ‘আজও
ইচ্ছে হচ্ছে।’ কিন্তু
ও রাজি হল না।
আমি আরও
জোরে জড়িয়ে ধরলাম।
আর একটু চাপাচাপি।
ক্ষণিক পরেই ও বিরক্ত
হয়ে গেল। আমি
টের পাইনি। ও
একটা কোলবালিশ টেনে বেড়া দিল। আমি
তা দেখেও দেখলাম না। চোখে
মাখলেও মাথায় ঢুকল না
যেন।
আর।
অত তুচ্ছ একটা কোলবালিশ!
ওটা আমাকে ঠেকাতে পারল না। আমি বীরদর্পে টপকে গেলাম। ভাবলাম, একটু আপত্তি করলে অমনি দমে যেতে হবে এমন তো কথা নেই। একজনের ইচ্ছে করছে, আরেক জনের করছে না—এমনটা ত দুএক বার হতেই পারে।
আর।
অত তুচ্ছ একটা কোলবালিশ!
ওটা আমাকে ঠেকাতে পারল না। আমি বীরদর্পে টপকে গেলাম। ভাবলাম, একটু আপত্তি করলে অমনি দমে যেতে হবে এমন তো কথা নেই। একজনের ইচ্ছে করছে, আরেক জনের করছে না—এমনটা ত দুএক বার হতেই পারে।
আরও কিছুক্ষণ
জোরাজুরি হল। ওর
মেজাজ খারাপ ছিল তা
আমার মনেই ছিল না। হঠাৎ
আমার গালে ঠা করে
একটা শব্দ হল।
একে তো মশারির ভেতরে,
তার ওপর যেভাবে হইচই
করছি—মশা ত আসার
কথা না।
একটু পরেই
খেয়াল করলাম, আমার গাল
জ্বলছে।
আমি শান্ত
হয়ে গেলাম। বিছানায়
চিত হয়ে গালে হাত
বোলাতে বোলাতে ভাবলাম, যেমন
কুকুর তেমনি মুগুর।
ও আমার বউ হয়েছে
তো কী হয়েছে, মেয়েমানুষ
তো মেয়েমানুষই। ওর
ইচ্ছে হয়নি, সুতরাং, জোর
খাটানোর উচিত দানই দিয়েছে।
রাতে আমার
চোখের পাতা এক হল
না। ভোরবেলা
লাল চোখে বিছানা ছাড়লাম। ওর
দিকে একবারও ফিরে তাকাইনি। নেয়েধুয়ে
সোজা অফিসে। অফিসে
কেউ আসেনি। আসবে
কি—আটটাই তো বাজেনি। হোটেলে
গিয়ে নাশতা করতে বসব,
প্যান্টের পকেটে মোবাইল ফোনটা
ডাকাডাকি শুরু করল।
মনিটরে চোখ বুলিয়ে আবার
রেখে দিলাম। একটু
পরে অনর্গল হইচই শুরু
করলে ওর মুখ বন্ধ
করাই উচিত।
অফিসে ফিরে
আমার এক বান্ধবীকে ফোন
করলাম। সে
প্রায়ই ফোন করে বাসায়
যেতে বলে। অথচ
গত সাত মাসে আমি
একবারও যাইনি। আমার
ফোন পেয়ে সে খুব
অবাক। আমি
তার স্বামী-শ্বশুরের খবর
নিলাম। সে
বলল, ‘তারা দুজনই এইমাত্র
বেরোয় গেল।’
‘তার মানে বাসায়
তুমি একা?’
‘হুঁউ!’
‘আমি আসছি!’
অফিস বাদ
দিয়ে বান্ধবীর বাসায়। এখান
থেকে বেরোব কাঁটায় কাঁটায়
চারটায়, যখন তার স্বামী-শ্বশুর অফিস থেকে
বেরোবে। এখান
থেকে যাব বন্ধুদের আড্ডায়। সেখানে
সাড়ে বারোটা পর্যন্ত।
বাসায় ফিরলাম সাড়ে বারোটায়। শাশুড়ি, শালা
আর শালিকে দেখেও কি
আর কিছু বুঝতে বাকি
থাকে। আমি
মুখে কুলুপ আঁটলাম।
ওরাও কেউ কিছু জিজ্ঞেস
করল না। ‘কেমন
আছ’
‘কোথায় ছিলে’
এসবও না। শুধু
শালিটা চোখ বড় বড়
করে তাকাল একবার।
তারপর মুচকি হেসে চলে
গেল। যেন
বলল, কোনো ব্যাপার না।
আমি বেশ
স্বস্তি পাই। তারপর
কাঁটায় কাঁটায় বারোটায় বিছানায়। অন্যদিনের
মতই। আমার
‘ও’
খুব মান করেছে বুঝেও
ফিরে তাকাব না।
কিছুতেই না। বরং। কোলবালিশ
টেনে বেড়া দিলাম।
ও হঠাৎ হইচই করে
উঠল। কোলবালিশটা
ছুড়ে ফেলে দিল।
আমি তবু কোনো কথা
বলব না। বুঝুক
মজা। ভাবলাম
আরও অন্তত দুই দিন
চুপ থাকব।
ও আমার
হাত ধরে মাফ চাইল,
মুখ ধরে নেড়েচড়ে দিল। এমনকি
জড়িয়ে ধরে এক-দুই
বার চুমুচামাও।
আমি গলে
উঠলাম, তবু শক্ত করে
বললাম, ‘আজ আমার ইচ্ছে
নেই।’ ভাবলাম,
বেশি লাই দেওয়া ঠিক
হবে না; বিগড়ে যেতে
পারে। এমনিতেই
অনেক দেওয়া হয়েছে, যার
ফল ভাল হয়নি এ
পর্যন্ত। কিন্তু
ও আবার হইচই করে
উঠল; সারাদিন আমি কোথায় ছিলাম,
ইত্যাদি প্রশ্ন করতে করতে
আমার নিশিবসন ধরে ক্ষিপ্র হাতে
টানাটানি শুরু করল।
আমি বালিশে
মুখ গুঁজে উপুড় হয়ে
পড়ে থাকব। ও
বারবার বলছে, ‘শুধু একটা
কথা কও!’
আমি—আরও
পরে—বিরক্ত ভঙ্গিতে উঠে
বসলাম। ও
আমার দিকে সন্দেহের আঙুল
তুলল? ‘তুমি—তুমি—তুমি—!’
ও তোতলাচ্ছে। হঠাৎ
ওর ডান হাতটা আমার
মুখের দিকে এগোয় এল
আর ঠা করে একটা
শব্দ।
আমার বাঁ
গালটা জ্বলে উঠল।
আমি চোখ বড় বড়
করে তাকালাম ওর মুখের দিকে। ও
ঝম করে শুয়ে পড়ল
আমার দিকে পিঠ ফিরে।
[২৪.০৮.০৯, সাতপাতা]