ন্যাংটো নেগ্রিটো

তারেক খান


টেথিস সাগরের নিচে মাটির কণ্ঠ যেন সত্যিই খুব ম্রিয়মাণ। তার বুকের ওপর পানির দুনিয়া।
দম্ভ করছে পানিরাশি, ‘আমি উত্তাল তরঙ্গমালা। যেমন খুশি ঢেউ হই তুমার বুকের ওপর।’ সে বলে, সে তাকে ভেদ করে চলে যায় যত খুশি গভীরে।
তা এমন দম্ভ সে করতেই পারে। চারদিকে যদ্দূর চোখ যায়, পানি আর পানি। বিশালকায় তিমির কালো কালো পিঠের ওপর দিয়ে গড়াগড়ি করে নীল তরঙ্গমালা। মাটিকে মোটে পাত্তাই দেয় না।
মাটি চুপচাপ হাসে। মাঝে মাঝে শান্তস্বরে বলে, ‘আমি চুপ, আমি শান্ত—এমন মনে কোরো না, আশ্রিত।’ সে বলে, তার অন্তস্তলে মুখোমুখি উত্তর-দক্ষিণ।
মাটির নিচে টগবগ করে ফুটছে জ্বলন্ত লাভা। আগুন ধরে যাচ্ছে মাঝে মাঝে। উত্তর প্লেট ও দক্ষিণ প্লেট পূর্ণাঙ্গ রূপ পাচ্ছে ধীরে ধীরে।
বিপুল জলরাশির চাপেও শান্ত হতে পারছে না পাথুরে মাটি। তার অন্তস্তলে ক্রমেই উত্তেজিত হচ্ছে কম্পমান তাপ। কুণ্ডলি পাকিয়ে উঠছে থেকে থেকে। দুনিয়াটাকে উলটে-পালটে ফেলার জন্য উদগ্রীব।
মেসোজেয়িক মহাকাল।
উত্তর প্লেট ও দক্ষিণ প্লেট দ্রুতবেগে এগিয়ে আসছে পৃথিবীর কেন্দ্রের দিকে।
তিমিগুলো দিগবিদিক ছুটতে শুরু করল। তারা যেন টের পাচ্ছে দুনিয়াটা উলটে-পালটে যাবে এখনই।
হঠাৎ বিকট শব্দে কেঁপে উঠল সারা পৃথিবী। টেথিসের বুকে পানি ভেদ করে উঠে পড়ল কুণ্ডলি পাকানো অগ্নিরাশি দিকে দিকে। কেউ যেন পৃথিবীটাকে দুহাতে ধরে ঝাঁকি দিল।
পৃথিবীর কোমর ভেঙে পাথুরে হাড়গোড় খাড়া খাড়া পর্বত হয়ে টেথিসের বুক চিরে আকাশে হেলান দেয়। ভিয়েতনাম থেকে হাঙ্গেরি অবধি সারেবেসারে।
আফ্রিকার শাখাচারী চতুষ্পদি মানু, বানর ছিটকে পড়ল দিকে দিকে। ডাল থেকে ডালে। কেউবা নিচে।
সবাই হতবিহ্বল। তারা হাঁ করে ডাল দেখে আর ভাবে ওটা অমন করে নাচন দিল কেন।
উঁ অ্যাঁ উঁউঁ এঁএঁএঁ। পঁ ভাঁঅঁঅঁ। হঁ ভঁ অঁ। হাতপা ভেঙে কাঁদছে দিকে দিকে মানু, বানর।
গাঁ অঁ লঁ। তারা আর গাছে উঠতে চায় না।
নঁ নঁ। কিঁ কিঁ কঁ। ইঁ গঁ সাঁ জিঁ। শক্ত কণ্ঠে প্রতিবাদ করল এক বুড়ি মানু। যে গাছে সারাটা জীবন কাটল, সেই গাছ ছেড়ে দিতে হবে? দোড় দিয়ে গিয়ে গাছে উঠে পড়ল।
ভঁ ভাঁ ভঁ। ভালুক আসতে দেখে সতর্ক করছে বুড়ি মানু।
কটা ভালুক কাছে এসে পড়লে মোটা মোটা গাছের গুঁড়ি বেয়ে ওপরে ওঠে দলে দলে মানু। কিন্তু যুবা নেগ্রি তেড়ে যায় ভালুকের দিকে।
অঁ অঁ অঁ। অজগর দেখে সতর্ক করছে আরেক বুড়ি মানু।
যুবা নেগ্রি আশপাশে চায়। একটা মরাগাছের মত পড়ে থাকা অজগর হাঁ করে নিশ্বাস টানছে আর একটা মানু হাতপা ছুড়ছে কিন্তু অজগরের নিশ্বাসের টানে তার মুখের দিকে পিছলে যাচ্ছে।
আরও কটা ভালুক তেড়ে এসে পড়লে নেগ্রিও দোড় দিয়ে গিয়ে গাছের গুঁড়ি বেয়ে উঠল।
বুড়ি মানু আর অন্যরা সবাই তার দিকে চেয়ে দাঁত বের করে। হাততালি দিতে দিতে ইঁ ইঁ করে হাসে। নেগ্রি কেমন বীর হয়েছে তা যেন সবাই বুঝে নিল।
মগডালে গিয়ে একটা লাল ফল ছিঁড়ে নিয়ে কামড় দিল যুবা নেগ্রি। কিন্তু এক বুড়ি মানু গিয়ে ঠুন্না মেরে কেড়ে নেয় আর সাথে সাথে লাফ দিয়ে অন্য ডালে।
যুবা নেগ্রি মুহূর্তমাত্র দেরি না করে দে লাফ। বুড়ি মানুর পিঠের ওপর উঠে জড়িয়ে ধরে বুক বরাবর হাত বাড়িয়ে। আর তার পুরুষদণ্ডটা যেন খাড়া হয়েই ছিল। একটুও দেরি না করে তারিয়ে দিল বুড়ির যোনি দিয়ে।
বুড়ি উঁ উঁ উঁ করে কান্দে কিছুক্ষণ। তারপর ভুলে যায়।
যঁ যাঁ ইঁ। আঁ উঁ ইঁ। যে যা-ই বলুক, যুবা নেগ্রির মাটিই বেশি পছন্দ। সে লাফ দিয়ে নেমে পড়ল। নামল আরও কটা মানু আর কটা বানর। মাটি দিয়ে হেঁটে খুব মজা পায় তারা। কিন্তু কিছুক্ষণ পরেই গাছে ফিরে গেল বানরগুলো।
মানুরা সারাদিন মাটি দিয়ে হেঁটে বেড়ায়। হাঁটতে হাঁটতে একটা জলপ্রপাতের কাছে এল। তখন প্রায় সন্ধে। আবার গাছের কথা মনে পড়ে বটে, যাদের ফেলে এসেছে তাদের আর খুঁজে পায় না। অগত্যা জলপ্রপাতের কাছে একটা গাছে রাত কাটায় তারা।
পরদিন সকালে আবার সঙ্গীদের খোঁজে বের হয়। পথে একদল ভালুকের মুখোমুখি। তাড়া খেয়ে দিগবিদিক ছুটতে হল। ছুটতে গিয়ে দল থেকে হারিয়ে যায় দুইজন। অন্যরা গাছে উঠে প্রাণে রক্ষা পেল। গাছ থেকে দেখা যাচ্ছে অদূরে সেই সুদৃশ্য জলপ্রপাত। মাটি দিয়ে হেঁটে বেড়ানোর লোভও মানুদের পেয়ে বসেছে। ভালুকগুলো চলে গেলে আবার মাটিতে নেমে পড়ল। এগিয়ে গেল জলপ্রপাতে দিকে। জল পড়ার শব্দ আর জল ভেসে চলার দৃশ্যে তারা অবাক হয়। আগেও তারা এমন দৃশ্য দেখেছে বটে, তা যেন চোখে ধরেনি। জলে নেমে দেখার লোভ হয় যুবা নেগ্রিটার। কিন্তু জলে নামতেই কুমিরের তাড়া খেয়ে আবার ডাঙায় ওঠে।
জাগাটার আশপাশে তাকায় যুবা নেগ্রি। আঁইঁ আঁউঁ। এ জাগাটা তার খুব পছন্দ হয়েছে। এখানে বেশি শীত নেই, বেশি গরম নেই। অনেকখানি ফাঁকা জাগা। একপাশে বৃহৎ হ্রদ, অন্যপাশে পাহাড়। পাহাড়ের পাশ দিয়ে জঙ্গল। ভালুক এলে সহজেই চোখে পড়বে। আত্মরক্ষার জন্য যথেষ্ট সময় পাওয়া যাবে এখানে থাকলে। পানির অভাব নেই। জঙ্গলও বেশি দূরে না। প্রয়োজনের সময় গিয়ে ফলমূল সংগ্রহ করা যাবে।
এখানে থাকতে থাকতে তারা সবাই গাছে চড়ার কথা ভুলতে বসে। আর পড়াড়ে যাবার লোভ হয় সময়-অসময়। কিন্তু ওখানে থাকে ভালুক, সিংহ, হায়েনা। নেগ্রির খুব রাগ হয়। চিরকাল কি ওদের ভয়ে হাতপা গুটিয়ে রাখতে হবে নাকি।
গাছের মগডালে উঠে ফল ছিঁড়তে ছিঁড়তে পাহাড়ের দিকে চায় যুবা নেগ্রি। হঠাৎ খুব অবাক হল একদল ভালুক দেখে। উঁ এঁ আঁ। অন্য মানুদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। মানুগুলো ইঁ ইঁ করে হাসতে লাগল নিচে ভালুকদের দিকে চেয়ে। গাছের পাতা ছিঁড়ে ফেলল কেউ কেউ। মুতে দিল কেউ কেউ। গাছে থাকলে তাদের আর পায় কে। ভালুকও গাছে ওঠে বটে, বেশি ওপরে উঠতে পারে না। আবার মানুরা লাফিয়ে লাফিয়ে একডাল থেকে অন্যডালে চলে যেতে পারে। ভালুকগুলো তা পারে না।
হাঁ হুঁ! যুবা নেগ্রির রাগ হয়। উঁ এঁ আঁ। ভালুকগুলো হঠাৎ কোত্থেকে উদিত হল তাই ভাবছে আর অন্যদেরও ভাবতে বলছে। কিন্তু কেউ তাকে পাত্তা দিল না। তারা বরং ভালুকগুলোকে উত্ত্যক্ত করে মজা লুটছে।
নেগ্রি হঠাৎ লম্ফঝম্প দিতে দিতে এক গাছ থেকে আরেক গাছে করে করে পাহাড়ের দিকে চলে গেল। লুকিয়ে লুকিয়ে দেখতে লাগল ভালুকগুলো কী করে।
আকাশটা আস্তে আস্তে কালো হয়ে আসছে।
ভালুকগুলোকে নিয়মিত নজরে রাখছে যুবা নেগ্রি।
ঝপঝপ করে বৃষ্টি নামল।
নেগ্রি অবাক হয় ভালুকগুলোর কাণ্ড দেখে। ভালুকগুলো যেন পর্বতের সাথে মিশে গেল প্রায় হঠাৎ করেই।
গাছ থেকে নেমে পর্বতের ওপরে ওঠে নেগ্রি। বৃষ্টিতে ভিজে ভিজে আশপাশে ঘুরে দেখছে। নিজেও একটা পর্বতের সাথে মিশে যেতে চেষ্টা করে কিন্তু হতাশ হয়। তবে ভালুকগুলোর কার্যকলাপ সে কিছুতেই ভুলতে পারে না।
বৃষ্টি থেমে গেল। একটু পরেই রোদ। নেগ্রি ভালুকের কথা ভুলে মনের দুঃখে চুপচাপ বসে ছিল। তার চোখ ছিল একটা পর্বতের দিকে। পর্বতের গোড়ায় কালো পিঠ থেকে একটা ভালুক বের হল। ঠিক যেখান থেকে ভালুকটা বের হল ওইখানে একবার যেতে হবে। নেগ্রি তক্কে তক্কে থাকল। তারপর একদৌড়ে গিয়ে একটা গাছে উঠে চারটা ছোট পর্বতের ওপর চোখ রাখে। আরও কটা ভালুক বের হল তিনটা পর্বত থেকে। একটা পর্বতের গোড়ায় কালো পিঠ থেকে বের হল তিনটা হায়েনা। দুইটা বড় আর একটা ছোট।
ভালুক-হায়েনা সবাই জঙ্গলে ঢুকে পড়লে আবার পর্বতের দিকে যায় নেগ্রি। খুব সাবধানে পা টিপে টিপে এগোয়, ভালুক-হায়েনা যেন কিছুতেই টের না পায়। একটু একটু এগোয় আর আশপাশে নজর রাখে। পর্বতের গোড়ায় কালো পিঠের কাছে গিয়ে সে অবাক। পর্বতের ভেতরে তাহলে এ রকম খোঁড়ল থাকে। এখান থেকে বের হয়েছে একটা ভালুক। আরও কি আছে নাকি।
থাক বা না থাক, নেগ্রি ভেতরে ঢুকে যায়। ছোট দুইটা ভালুকশাবক নেগ্রিকে দেখেই কুঁইকুঁই করে উঠল। অন্ধকারে ভাল দেখা যাচ্ছে না। তবে এটা বোঝা যাচ্ছে, যারা কুঁইকুঁই করছে তারা বেশি শক্তিশালী না। ওরা কারা? ওরা ভালুকশাবক কিনা তা নেগ্রি ভেবেও ভাবল না। এতখানি ভাবতে শেখেনি এখনও। সে বরং চুপিচুপি এগিয়ে যায়। শাবক দুটোকে এক হাতে বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে তিন হাতপায়ে হেঁটে বেরিয়ে আসে খোঁড়ল থেকে। শাবক দুটো নিয়ে গিয়ে অন্য মানুদের দেখাতে চায়। তার যে অনেক সাহস, পাহাড়ে ভালুকদের আস্তানায় যে সে যেতে পারে তা তাদের বুঝিয়ে দিতে হবে। কিন্তু তিন হাতপায়ে হাঁটা যা কঠিন—! যদি পথে কোনো ভালুকের সামনে পড়ে তাহলে তো আবার বেঘোরে প্রাণটা যাবে।
নেগ্রির মায়ের কথা মনে পড়ে। গাছ থেকে হাত ফসকে পড়ে গেল একদিন। অমনি ভালুকের মুখে। যদিও তার মা প্রায় সবচে ভাল গাছুয়া ছিল। নেগ্রিও মায়ের কাছ থেকে শিখে নিয়েছে কৌশলগুলো। দুইটা ভালুক মিলে তার মাকে ছিঁড়েখুঁড়ে খাচ্ছে—দৃশ্যটা চোখে ভাসতেই নেগ্রি ভালুকশাবক দুটোকে আছাড় দিল।
গেছো জীবনের প্রতি নেগ্রির খুব রাগ হয়। এ জীবনে আর সে গাছে উঠতে চায় না। যদি সবাই তাকে ছেড়ে যায়ও। কিন্তু এ ভাবনা আর বেশি এগোল না। তার বরং ভালুকের বাচ্চাদুটোর ওপর ক্রোধ হয়। বড় হয়ে তো নেগ্রিদেরই ঘাড় মটকাবে। তারচে বরং—। শাবকদুটোকে আরও একবার আছাড় দিল মাথার ওপর তুলে।  
শাবক দুটো মারা গেছে।
কি করা যায় ওদের এখন? ওরা যেমন মানুদের পেলেই খেয়ে ফেলে—! কিঞ্চিৎ ভেবে নেগ্রিও তাই শুরু করল।
একটা শাবকের ঘাড়ে কামড় বসাতেই লোভ লেগে যায় নেগ্রির। এর মাংস ব্যাঙের চেয়ে নরম আর রক্ত যেন অমৃত। আর ব্যাঙের গায়ে তো—। ‘রক্তই নেই’ ভেবেও ভাবে না। ভাবনা এগোয় না। সে বরং আপন মনে মজা করে খেতে লাগল। বেমালুম ভুলে গেল ভালুকের আক্রমণের কথা। শুধু তার মাংস আর রক্তের কথাই মনে আসছে বারবার।
কিছুক্ষণের মধ্যেই নেগ্রির চোখ ছানাবড়া হয়ে যায়। হাঁ করে চেয়ে থাকে সামনের দিকে। তিন তিনটে ভালুক ছুটে আসছে। পালানোরও পথ নেই আশপাশে। ভালুকগুলো তার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়লে তবে তার সংবিৎ ফেরে। তবে জোরে এক লাফ দিল সে। একলাফে পর্বতের গায়ে গিয়ে পড়ল। ভালুকগুলোও যায় বটে, নেগ্রি আরও একলাফে পর্বতের ওপর দিকে।
প্রায় খাড়া পর্বতের এবড়োখেবড়ো পাথর ধরে কষ্টেমষ্টে ওপরে ওঠে নেগ্রি। ভালুকগুলোও বেয়েছেয়ে ওপরে ওঠার চেষ্টা করছে। নেগ্রি একটা বড় পাথরখণ্ড ধরে আরও ওপরে উঠতে চেষ্টা করছে। কিন্তু পাথরটা আলগা ছিল। গড়িয়ে পড়ল নেগ্রির পায়ের একটা আঙুল থেঁতলে দিয়ে। তবে নেগ্রির চোখ পাথরটার দিকে। অবাক হয়ে চেয়ে থাকে। পাথরটা যেখান দিয়ে গড়িয়ে যাচ্ছে সেখানে মাঝে মাঝে আগুন ধরে যাচ্ছে। আর ভালুকগুলোও পিছিয়ে যাচ্ছে। তবু সব ভালুক রক্ষা পেল না। একটা ভালুকের মাথা ছিটকে পড়ল দিগবিদিক। তার বিশাল দেহটা পড়ে রইল। অন্য ভালুকগুলো পিছিয়ে যাচ্ছে।
নেগ্রি পড়ে থাকা ভালুকটার দিকে চেয়ে জিবে দিয়ে ঠোঁট চাটে। কিন্তু তার সাহসে কুলোয় না। সে বরং আরেকটা বড় পাথর ধরে টানাটানি করতে লাগল। আলগা হলে গড়িয়ে দিল ঢালের দিকে। এবারও আগুন ধরল। ভালুক দুটো সেদিকে একবার চেয়েই দে ছুট। নেগ্রি একপায়ে দাঁড়িয়ে হাততালি দেয় আর ইঁ ইঁ করে হাসে। তার খুব মজা লাগে। হঠাৎ সঙ্গীদের কথা মনে পড়লে দে ছুট। থেঁতলানো আঙুলের পা উঁচু করে তিন হাতপায়ে দোড়োয় নেগ্রি। আঙুলটা আরও ফুলছে আর ব্যথা বাড়ছে।
নেগ্রির সাথিরা সবাই উৎকর্ণ হয়ে পথের দিকে চেয়ে। নেগ্রিকে দেখেই উঁ উঁ করে চিল্লিয়ে ওঠে। কজন আবার দুপায়ে ভর দিয়ে দাঁড়ায়। অতি-উৎসাহে যেমনটা তারা করে থাকে মাঝেমধ্যে। আরও কজনও দুপায়ে দাঁড়াতে চেষ্টা করে কিন্তু তারা পড়ে যায়। দুপায়ে দাঁড়ানো সবাই ইঁ ইঁ করে হাসে তাদের হুমড়ি খেয়ে পড়া দেখে। দু পায়ে দাঁড়ানো কি অত সোজা নাকি।
নেগ্রি কাছে আসতেই দুপেয়ে মানুরা বুক বাড়িয়ে দিল। কিন্তু নেগ্রি দাঁড়াতে পারে না। একপায়ে কি আর দাঁড়ানো যায়। দু পায়ে তাই ঠিকমত পারে না। তবু চেষ্টা করে। একটু খাড়া হতেই কজন তাকে জড়িয়ে ধরল। নেগ্রির চোখ থেকে পানি ঝরছে। তার মনে খুব দুঃখ। ভালুকগুলোর ভয়ে কি চিরটা কাল গাছে গাছে থাকতে হবে নাকি।
আঁ আঁ ইঁ। আগুনের দৃশ্য নেগ্রির চোখের সামনে। কিন্তু কি করে সে এখন খবরটা দেবে সবাইকে। আবারও বলল, আঁ আঁ ইঁ। কেউ বুঝতে পারছে না বলে তার গলা থেকে বেরোতেই থাকে, আঁ আঁ ইঁ ইঁ আঁ উঁ উঁ ইঁ।
সবাই মুখ-চাওয়া-চাওয়ি করে। কেউ কিছু বুঝতে পারছে না।
নেগ্রির খুব রাগ হয়। আরও জোরে বলে, আঁ আঁ ইঁ ইঁ আঁ উঁ উঁ ইঁ।
অন্য একজন বলল, হেঁউঁ আঁ ইঁ আঁ উঁ উঁ হুঁউঁ ইঁ।
তারপর আরও দুজন এবং তারপর সবাই মিলে শুরু করল। জঙ্গলটা কাঁপিয়ে দিচ্ছে। এ যেন ভাবপ্রকাশে ব্যর্থতার ক্রোধ।
[নতুন ধারায় প্রথম প্রকাশিত]


—০—